প্রেম বাজি - একটি অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প

প্রেম বাজি - একটি অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্পি

সিমান্ত এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে।
তার সাথে ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে আরেকটি ছেলে নাম শাওন। দুজনের এর আগে কোনো পরিচয় ছিল না। তবে একই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে দুজনের মধ্যে ভালো রিলেশন গড়ে উঠে।
ওরা দুজন মিলে যেনো হয়ে যায় এক। ওদের সাথের একটি মেয়েকে দেখে খুব ভালো লেগে যায় সিমান্তের।
এবং এ কথা সে শাওন কে জানায়। এবং দুজন মিলে চেষ্টা করে জানতে পারে মেয়েটির নাম জেবিন।
তারা দুজনেই সুযোগ খুঁজতে থাকে কিভাবে কথাটা জেবিনকে জানানো যায়। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হচ্ছিলো না।
কিন্তু একদিন দেখলো জেবিন আর তার এক বান্ধবী কলেজের দিকে আসছে। তাই সুযোগ পেয়ে শাওন জেবিন এর সামনে গিয়ে দাড়ালো আর সিমান্ত একপাশেই দাড়িয়ে রইলো।


শাওন: হ্যালো, জেবিন দাড়াও তোমার সাথে কথা আছে।
জেবিন: আমার সাথে? আপনার? কি কথা?

শাওন: হ্যাঁ, আমার ফ্রেন্ড সিমান্ত তোমাকে অনেক পছন্দ করে। সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে। সে শুধু তোমাকেই চাই।
সে তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না। জেবিন উত্তর না দিতেই তার পাশে থাকা মেয়েটি বলতে শুরু করলো, এই যে ভাইয়া আপনার লেকচার মারা শেষ হইছে???
আপনি জানেন আমরা কোন ফেমিলির মেয়ে? আমাদের ফেমিলিতে এসব প্রেম ভালোবাসা এলাউড না।
বুজছেন? আর কোন সাহসেই বা আপনি এসব প্রস্তাব নিয়ে আসেন? আমি আর জেবিন এসব ঘৃনা করি আর ঘৃনা করি আপনাদের মত ছেলেদেরকেও।
কথা গুলো বলেই তারা চলে গেলো কিন্তু শাওন পুরা থমকে গেলো এসব কথা শুনে। কিন্তু শাওন মোটেও কাউকে ছেড়ে কথা বলার মত ছেলে নয়। আর তাছাড়া মেয়েটির কথা বলার ভাব টাও শাওনের ভালো লাগেনি।
তাই শাওন ভাবলো সেও প্রতিশোধ নিবে এটা যেকোনো ভাবেই। শাওন একটু খোঁজাখোঁজি করে মেয়েটির নাম জানতে পারলো নাম ফারিহা। মেয়েটি জেবিনেরই কাজিন হয়। এবং একই ফ্ল্যাট এ থাকে ওরা।

এবার শাওনের লক্ষ্য সে ফারিহার সাথে প্রেম করবে এবং তাকে ছ্যাকা দিয়ে কষ্ট দিবে। তাই সে ফারিহার পিছে গুরতে লাগলো। ফারিহা যে কোচিং সেন্টারে পড়ে শাওন ও সেখানে পড়া শুরু করলো। ফারিহার সাথে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে এটা ওটা বলে।
এভাবেই প্রায় ৬ মাস কেটে যায়। এরই মধ্যে শাওন আর ফারিহার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। শাওন ফারিহার মোবাইল নাম্বার নেয়। দুজনেই ফোনে কথা বলে আবার চ্যাটিং করে। দুজনে মিলে আইস ক্রিম খায়।
অবসর সময়ে আড্ডা দেয়। মাঝে মাঝে গল্প করে এভাবেই কাটতে থাকে তাদের সময়। আর দিনে দিনে শাওন ও ফারিহাকে নিজের প্রতি দুর্বল করে তোলে। আর শাওন ও যেনো তার প্রতিশোধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তো একদিন শাওন ফারিহাকে বললো আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিতে হবে।

ফারিহা: আচ্ছা, কি সেই প্রশ্ন?
শাওন: দেখো, তুমি জানো কিনা জানি না তবে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর আমার প্রশ্ন তুমিও কি আমাকে ভালোবাসো?
ফারিহা: আমি প্রশ্নটার উত্তর হুট করে দিতে পারবোনা।
শাওন: এর জন্য তুমি কতক্ষন সময় চাও?
ফারিহাা: আমাকে একদিন সময় দিতে হবে উত্তর টার জন্য। আমি তোমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে অনেক ভালোবাসি কিন্তু এর বাইরে কিছু আছে কিনা আমি বুঝে উঠতে পারছিনা।
শাওন: ঠিক আছে, কালকে জানালেই হবে। তো শাওন পরের দিন কোনো উত্তর না পেয়ে সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে ফারিহাকে বললো আজকে তোমার উত্তর জানানোর কথা ছিলো তাই না?
ওপাশ থেকে উত্তর আসলো, হ্যাঁ, বলছিলাম তো।
কিন্তু আমি মুখে বলতে পারছিনা তোমাকে টেক্সট করে পাঠাচ্ছি।
একটু পরেই শাওন এর মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠে এসেছে ফারিহার নাম্বার থেকে আর মেসেজটা ওপেন করেও দেখে লেখা,
Love u to shawon.....
এবার শুরু হয়ে গেলো তাদের প্রেম। দুজনে কলেজে একসাথে আসা যাওয়া করে। দুজন মিলে কলেজ থেকে যাওয়ার সময় বৃষ্টি আসলে দুজনেই হয় ভিজে ভিজে যেতো নাহয় একই ছাতার নিচে করে যেতো।
আর দুজনে একসাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতো মাঝে মাঝে। আর ফারিহার প্রিয় আইস ক্রিম তো থাকতোই।
আর এদিকে তাদের সম্পর্কটাও আরো গভীর হতে থাকলো। আর সম্পর্কটায় ফারিহার কাছে ভালোবাসা টা সত্য মনে হলেও শাওনের কাছে ছিলো প্রতিশোধের অভিনয় মাত্র।
ফারিহা শাওনকে সত্যিকারেই ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু শাওন একদিন ফারিহাকে সরাসরি বলে দিলো যে এই রিলেশন কন্টিনিউ করা তার পক্ষে সম্ভব না।
সে তাকে সব বলে দিলো, বলে দিলো যে এটা ছিলো তার প্রতিশোধ।
এসব কথা শুনে ফারিহা অনেকটা কান্নাই করে দিলো।
আর কান্না করবেই না কেনো? কারন সে তো অভিনয় করতে পারে নি। সে তো সত্যিকারেই ভালোবেসেছিলো।
আর সত্যিকারের ভালোবাসা টা ভুলে থাকা কি এতই সহজ? কিন্তু শাওনের কোনো জবাবই ফারিহা দেয় নি। হয়ত অনেক কিছুই ছিলো বলার।
কিন্তু বলার ভাষা খুঁজে পায় নি। ফারিহার চোখের জল পারেনি শাওন এর মনকে গলাতে।
তারা দুজনেই নিজ বাসায় চলে যায়। ফারিহা বাড়িতে গিয়েও কান্না করে অনেক।
যেনো জিবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। পাল্টে গেছে তার জিবনটাই। ভালো লাগে না কোনো কিছুই।
খাবার ও খায় না ঠিকমত। আর শাওন বাসায় গিয়ে খারাপ বোধ করা শুরু করলো। শাওনের মনে হত লাগলো শাওন ফারিহাকে নিজের প্রেমে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফারিহার প্রেমে ফেঁসে গেছে ফারিহার প্রেমে।
ওর সাথে অভিনয় করতে গিয়ে আসলেই ভালোবেসে ফেলেছিলো শাওন। ফারিহার চোখের জল শাওনের মন গলাতে না পারলেও সেই কান্না মাখা চেহারা টা শাওনকে নিদারুন কষ্টে পতিত করছে।
সে এখন কিছুই করতে পারছে না। পুরনো দিনের স্মৃতি গুলো তার মনে একত্রে জড়ো হয়েছে। দুজনের গল্প করা, একসাথে বসে খাওয়া, একসাথে কলেজে আসা-যাওয়া করা আর বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতিগুলো তার মনকে আবেগীয় করে তোলে। সে বুজতে পারে না কি করে ভুলে যাবে এতো সব স্মৃতির পাতা।
আর এটাও বুজতে পারে না এখন তার কি করা উচিৎ। এভাবেই কেটে যায় দুজনের জন্য বিষন্নতায় ভরা তিন দিন। এবার শাওন নিজের মনকে স্থির করলো যে সে ফারিহার সাথে দেখা করবে এবং কথা বলবে। তাই সে দেরি না করে রেডি হয়ে কলেজের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
আর একটুপর দেখলো ফারিহাও কলেজের দিকে আসছে। এবারও তাদের দেখা সে জায়গায় যেখানে ফারিহার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো শাওন এর। শাওন ফারিহা কে ডাক দিয়ে দাঁড় করালো-

শাওন: ফারিহা, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
ফারিহা: কী বলবে? বলো। তাড়াতাড়ি করে আমার হাতে তেমন সময় নেই। [ একটু অভিমানি গলায়]
শাওন: আমি আগে যা করছি তোমার সাথে আমার অন্যায় ছিলো। আমি আমার ভুল বুজতে পারছি। আমি চেষ্টা করেও তোমার সাথের স্মৃতিগুলো ভুলতে পারিনি। আমরা কি পারিনা ভুলগুলো ভেঙে আগের মত হয়ে যেতে?
ফারিহা: আমি যা কষ্ট পেয়েছি একবারে পেয়েছি ২য় বারে পেতে চাই না। আর কারো অভিনয়ের স্বীকার ও হতে চাই না।
শাওন: বিশ্বাস কর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
ফারিহা: কিভাবে করবো বিশ্বাস? রেখেছো সে উপায়?
শাওন: আর একটি সুযোগ চাই। এই যে তোমার হাতটা ধরলাম আর কখনোই ছেড়ে দিবো না।
ফারিহা: সত্যি তো! ছেড়ে দিলে খবর আছে কিন্তু।
শাওন: ঠিক আছে। চল হাটিঁ কলেজের সময় হয়ে গেছে।
(TO BE CONTINUED)

Note!
"প্রেম বাজি" গল্পটি লিখেছেন "সাব্বির আহমেদ শুভ" 2018 সালের দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন লিখেছেন । গল্পটি এই ব্লগে প্রকাশ করা হয়েছে শুধুমাত্র সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে।